Thursday, November 23, 2017

সফর অবস্থায় নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান

সফর অবস্থায় নামাজ

সফর অবস্থায় নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান :-
যে সফর দ্বারা শরীআতের আহকাম পরিবর্তিত হয়, তা হল তিন দিন তিন রাত্রি পরিমাণ দূরত্বে যাওয়ার ইচ্ছা করা উটের গতি বা হেটে চলার গতি হিসাবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- মুকীম পূর্ণ একদিন একরাত্র মাস্‌হ করবে, আর মুসাফির করবে তিন দিন তিন রাত্র।

যে সফর দ্বারা শরীআতের আহকাম পরিবর্তিত হয়, তা হল তিন দিন তিন রাত্রি পরিমাণ দূরত্বে যাওয়ার ইচ্ছা করা উটের গতি বা হেটে চলার গতি হিসাবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- মুকীম পূর্ণ একদিন একরাত্র মাস্‌হ করবে, আর মুসাফির করবে তিন দিন তিন রাত্র। মাস্‌হ্‌র অবকাশ মুসাফির সম্প্রদায়কে সামগ্রিকভাবে শামিল করেছে। আর তার অনিবার্য প্রয়োজন হবে (সফরের) সময়সীমা সম্প্রসারণ। ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) তা নির্ধারণ করেছেন দুই দিন এবং তৃতীয় দিনের অধিকাংশ সময় পরিমাণ দ্বারা। আর ইমাম শাফিঈ (র.) নির্ধারণ করেছেন একদিন একরাত্র পরিমাণ দ্বারা। আর উভয়ের বিপরীতে প্রমাণ হিসাবে আলোচ্য হাদীছই যথেষ্ট। আর উল্লেখিত পথচলা দ্বারা মধ্যমগতির পথ চলা উদ্দেশ্য। ইমাম আবূ হানীফা (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মনজীল দ্বারা দূরত্ব নির্ধারণ করেছেন। আর এ মত হল প্রথমোক্ত দূরত্ব পরিমাণের নিকটবর্তী। ফরসখ মাইল দ্বারা দূরত্ব নির্ধারণ গ্রহণযোগ্য নয়। এ-ই বিশুদ্ধ মত। আর নৌপথের চলার গতিকে পরিমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হবে না। অর্থাত্ স্থল পথের জন্য নৌপথের যাত্রাকে পরিমাপ হিসাবে গণ্য করা হবে না। আর সমুদ্রে তার উপযোগী যাত্রা পরিমাপ বিবেচ্য, যেমন পার্বত্য পথের হুকুম। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, চার রাকাআত বিশিষ্ট সালাতে মুসাফিরের জন্য ফরজ হল দুই রাকাআত। এর অধিক আদায় করবে না। ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, মুসাফিরের (মূল) ফরজ চার রাকাআত। তবে কসর করা্ হল রুখছত, সাওমের উপর কিয়াস করে।
আমাদের দলীল এই যে, দ্বিতীয়ার্থ দুই রাকাআত কাযা করতে হয় না এবং তা তরক করার কারণে গুণাহ্ হয় না। আর এ হল নফল হওয়ার আলামত। পক্ষান্তরে সাওমের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা কাযা করতে হয়। আর যদি চার রাকাআত পড়ে নেয় এবং দ্বিতীয় রাকাআতে তাশাহ্‌হুদ পরিমাণ বৈঠক করে, তাহলে প্রথম দুই রাকাআত ফরজ হিসাবে আদায় হয়ে যাবে এবং শেষ দুই রাকাআত নফল হবে। ফজরের সালাতের উপর কিয়াস করে। অবশ্য সালাম বিলম্ব করার কারণে গুণাহ্‌গার হবে। আর যদি দ্বিতীয় রাকাআতে তাশাহ্‌হুদ পরিমাণ বৈঠক না করে তাহলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কেননা, ফরযের রুকনসমূহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই নফল তার সাথে মিলে গেছে। মুসাফির যখন বস্তির আবাদী ত্যাগ করবে তখন থেকেই দু’রাকাআত আদায় করবে। কেননা, বস্তিতে প্রবেশের সাথে মুকীম হওয়া সম্পৃক্ত। সুতরাং সফরের সম্পর্ক হবে বস্তি থেকে বের হওয়ার সাথে। এ সম্পর্কে আলী (রা.) থেকে নিম্নোক্ত বানী বর্ণিত আছে। যদি আমরা বস্তির গৃহসমূহ অতিক্রম করি তখনই অবশ্য সালাত কসর করব। সফরের হুকুম অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না কোন শহরে বা বস্তিতে পনের দিন বা তার বেশী থাকার নিয়্যত করে। যদি এর কম সময় থাকার নিয়্যত করে তাহলে কসর করবে। কারণ সফরের একটি মিয়াদ নির্ধারণ করা জরুরী। কেননা সফরে স্বভাবতঃ বিরতি ঘটে থাকে। তাই আমরা সফরের মিয়াদ নির্ধারণ করেছি (দুই হায়যের মধ্যবর্তী) তুহরের মিয়াদ দ্বারা। কেননা উভয় মিয়াদই কিছু আহকাম আরোপ করে। আর এটি ইব্‌ন ‘আব্বাস ও ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর এ ধরণের ক্ষেত্রে সাহাবীর বাণী হাদীছের মত।
শহর বা বস্তির শর্ত এ দিকে ইংগিত করে যে, মাঠে প্রান্তরে ইকামতের নিয়্যত করা সহীহ্‌ নয়। এ-ই জাহির রিওয়ায়াত। যদি এমন সুদৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে কোন শহরে প্রবেশ করে যে, আগামীকাল অথবা পরশু এখান থেকে বের হয়ে যাবে এবং সে মুকীম হওয়ার নির্ধারিত মেয়াদের নিয়্যত করল না; এমন কি এভাবে সে কয়েক বছর অবস্থান করল, তাহলে সে কসর করতে থাকবে। কেননা, ইব্‌ন ‘উমর (রা.) আজারবাইজান শহরে ছয়মাস অবস্থান করেছেন এবং তিনি এ সময় কসর করতে থাকেন। আরও বহু সাহাবায়ে কিরাম থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। সৈন্যবাহিনী যখন শত্রু এলাকায় প্রবেশ করে এবং ইকামতের নিয়্যত করে তখন তারা কসরই পড়বে। তদ্রুপ যদি শত্রু দেশের কোন শহর বা দুর্গ অবরোধ করে। কেননা শত্রুভূমিতে প্রবেশকারীর অবস্থা দোদুল্যমান; হয়ত পরাজিত হয়ে স্থান ত্যাগ করবে, নয়ত (শত্রুভূমিকে) পরাস্ত করে তথায় স্থায়ী হবে। সুতরাং তা ইকামাতের স্থান হতে পারে না। অনুরূপভাবে (কসর আদায় করবে) যদি (মুসলিম) বাহিনী দারুল ইসলামের বিদ্রোহীদের শহর বহির্ভূত কোন এলাকায় অবরোধ করে কিংবা সমুদ্রে তাদের অবরোধ করে। কেননা তাদের অবস্থা তাদের নিয়্যতের দৃঢ়তা বাতিল করে।
যুফার (র.) এর মতে উভয় অবস্থায় (ইকামাতের নিয়্যত) গ্রহণযোগ্য হবে, যদি মুসলিম বাহিনীর শক্তিতে প্রাধান্য থাকে। কেননা, সে অবস্থায় বাহ্যতঃ তারা অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম। ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে যদি তারা বস্তি এলাকায় থাকে তবে (নিয়্যত) গ্রহণযোগ্য হবে; কেননা বস্তি এলাকা ইকামত করার স্থান। আর তাঁবুবাসীদের সম্পর্কে ইকামতের নিয়্যত কারো কারো মতে দুরস্ত নয়। তবে বিশুদ্ধ মত এই যে, তারা মুকীম বিবেচিত হবে। ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) থেকে তাই বর্ণিত রয়েছে। কেননা ইকামত হলো (মানুষের জীবনের) আসল অবস্থা। সুতরাং এক চারণভূমিতে যাওয়ার কারণে তা বাতিল হবে না্। আর যদি মুসাফির যদি ওয়াক্তিয়া সালাতের ক্ষেত্রে মুকীমের পিছনে ইক্‌তিদা করে তাহলে চার রাকাআত পুরা করবে। কেননা তখন অনুসরণের বাধ্যবাধকতায় তার ফরজ চার রাকাআতে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যেমন তার নিজের ইকামতের নিয়্যত দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। কারণ, পরিবর্তনকারী বিষয় (অর্থাত্ ইকতিদা) ‘সবব’ এর সাথে (অর্থাত্ ওয়াক্‌তের সাথে) যুক্ত হয়েছে। যদি মুকীম ইমামের সঙ্গে কাযা সালাতে শামিল হয়, তবে তা জাইয হবে না। কেননা, ফরজ পরিবর্তিত হয় না ওয়াকতের পর সবব বিলুপ্ত হওয়ার কারণে; যেমন ইকামতের নিয়্যত দ্বারা পরিবর্তিথ হয় না। এমতাবস্থায় এটা বৈঠক ও কিরাতের ক্ষেত্রে নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায়কারীর ইকতিদার মত হয়ে যাবে, যা দুরস্ত নয়।
মুসাফির যদি দুই রাকাআতে মুকীমদের ইমামতি করে তবে সে (দুই রাকাআত শেষে) সালাম ফিরাবে আর মুকীমগণ তাদের সালাত পূর্ণ করে নিবে। কেননা, মুকতাদীরা দুই রাকাআতের ক্ষেত্রে (মুসাফির ইমামের) অনুসরণে বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করেছে। সুতরাং অবশিষ্ট সালাতের ক্ষেত্রে তারা মাসবূকের মত একাকী হয়ে পড়বে। তবে বিশুদ্ধ মতে সে কিরাত পড়বে না। কেননা তারা তাহরীমার বেলায় মুকতাদী, অন্যান্য কাজের বেলায় নয়। আর ফরজ (কিরাত) আদায় হয়ে গেছে। সুতরাং সতর্কতা হিসাবে কিরাত তরক করবে। মাসবূকের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা, সে নফল কিরাত পেয়েছে। সুতরাং (কিরাতের) ফরজ বিরতি আদায় হয়নি। সুতরাং (তার ক্ষেত্রে) কিরাত পড়াই উত্তম। সালাম ফিরানোর পর (মুসাফির) ইমামের পক্ষে একথা বলে দেওয়া মুসতাহাব যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। আমরা মুসাফির কাফেলা। কেননা, মুসাফির অবস্থায় মক্কাবাসীদের ইমামতি করার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরূপ বলেছিলেন।
মুসাফির যখন আপন শহরে প্রবেশ করবে তখন সালাত পূর্ণ করবে। যদিও সেখানে সে ইকামতের নিয়্যথ না করে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম সফর করতেন। অতঃপর ইকামাতের নতুন নিয়্যত ব্যতীত ওয়াতানের দিকে ফিরে এসে মুকীম হিসাবে অবস্থান করতেন। যদিও কারও নিজস্ব আবাসভূমি থাকে অতঃপর সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য স্থানকে আবাসভূমি রূপে গ্রহণ করে, তবে অতঃপর সফর করে প্রথম আবাসভূমিতে প্রবেশ করে, তবে সে কসর পড়বে। কেননা প্রথমটি তার আবাসভূমি থাকে না। একথা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজেকে মক্কায় মুসাফির গণ্য করেছিলেন। এর কারণ এই যে, নীতি হল, স্থায়ী আবাসভূমি অনুরূপ আবাসভূমি দ্বারা বাতিল হয়ে যায়, সফর দ্বারা হয় না। পক্ষান্তরে অস্থায়ী অবস্থান স্থল দ্বারা, সফর দ্বারা এবং স্থায়ী আবাসভূমি দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। মুসাফির যদি মক্কায় ও মীনায় পনের দিন থাকার নিয়্যত করে তবে সে কসর পড়বে। কেননা দুই স্থানে ইকামতের নিয়্যত যদি এ’ তেবার করা হয়, তাহলে বিভিন্ন জায়গার ইকামতের নিয়্যতকেও মিলিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। আর তা নিষিদ্ধ। কেননা, সফর তো বিভিন্ন স্থানে অবস্থান থেকে মুক্ত নয়। তবে যদি উভয়ের মধ্যে একটিতে রাত্রিযাপন করার নিয়্যত করে থাক তবে সে সে স্থানে প্রবেশ করার সাথে সাথে মুকীম হয়ে যাবে। কেননা, লোকের ইকামতের বিষয়টি তার রাত্রি যাপনের স্থানের সাথে সম্পৃক্ত।

নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করার বিধান

নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করার বিধান :-
আরাফা দিবসের ফজরের সালাতের পর থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরু করবে এবং কুরবানী দিবসের আসরের সালাতের পর তা শেষ করবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মত। সাহেবাইন বলেন, আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন আসরের সালাতের পর তা শেষ করবে।
আরাফা দিবসের ফজরের সালাতের পর থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরু করবে এবং কুরবানী দিবসের আসরের সালাতের পর তা শেষ করবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মত। সাহেবাইন বলেন, আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন আসরের সালাতের পর তা শেষ করবে। বিষয়টি সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরামের
মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাই সাহেবাইন আলী (রা.) এর মত গ্রহণ করেছেন, দিবসের সংখ্যাধিক্যের উপর প্রেক্ষিতে। কেননা, ইবাদতের ব্যাপারে এতেই সতর্কতা রয়েছে। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (র.) নিম্নতর সংখ্যার উপর আমল করার উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)
এর মত গ্রহণ করেছেন। কেননা উচ্চৈস্বরে তাকবীর বলার মধ্যে নতুনত্ব রয়েছে (তাই নিশ্চিতের উপর আমল করা শ্রেয়ঃ)।
আর তাকবীর হল একবার বলবেঃ কেননা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্‌ আলায়হিস সালাম থেকে এরূপই বর্ণিত রয়েছে। আর এইটি ফরজ সালাতসমূহের পর ওয়াজিব। ইমাম আবূ হানীফার মতে শহরে মুস্তাহাব জামা’আতে সালাত আদায়কারী মুকীমদের উপর। সুতরাং স্ত্রী লোকদের জামা’আতের ক্ষেত্রে
যেখানে কোন পুরুষ নেই, এবং মুসাফিরদের জামা’আতের বেলায় যাদের সঙ্গে কোন মুকীম নেই, সেখানে তা ওয়াজিব হবে না। সাহেবাইন বলেন, তা ওয়াজিব ফরজ সালাত আদায়কারী প্রত্যেকের উপর। কেননা এ তাকবীর ফরজ সালাতের অনুগামী । ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর দলীল হল ইতোপূর্বে
আমাদের বর্ণিত হাদীছ। তাশরীক অর্থ উচ্চৈস্বরে তাকবীর বলা। খলীল ইব্‌ন আহমদ থেকে এটি বর্ণিত। তাছাড়া উচ্চৈস্বরে তাকবীর বলা সুন্নতের খিলাফ।
আর শরীআতে এর প্রমাণ পাওয়া যায় উপরোক্ত শর্তসমূহ একত্র হওয়ার বেলায়। অবশ্য স্ত্রী লোকেরা পুরুষের পিছনে ইকতিদা করলে এবং মুসাফিরগণ মুকীমের পিছনে ইকতিদা করলে অনুগামী হিসেবে তাদের উপরও (তাকবীরে তাশরীক) ওয়াজিব হবে। ইমাম (আবূ ইউসূফ) ইয়া’কূব( র.)
বলেন, আরাফা দিবসে মাগরিবের সালাতে আমি ইমামতি করলাম এবং তাকবীর বলতে ভুলে গেলাম। তখন ইমাম আবূ হানীফা (র.) তাকবীর বললেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম তাকবীর তরক করলেও মুক্তাদী তা তরক করবে না। কেননা এটা সালাতের তাহরীমার মধ্যে আদায় করা হয় না। সুতরাং
তাতে ইমাম অপরিহার্য নন। বর‌ং ইমামের অনুরণ মুস্তাহাব মাত্র।

Wednesday, November 22, 2017

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান :-

ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন ইমাম নফলের অনুরূপ দু’রাকাআত সালাত আদায় করবেন। প্রতি রাকাআতে একটি রুকই হবে। ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, (প্রতি রাকাআতে) দু’টি রুকু হবে। তার দলীল হল ‘আইশা (রা.) বর্ণিত হাদীছ।

ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন ইমাম নফলের অনুরূপ দু’রাকাআত সালাত আদায় করবেন। প্রতি রাকাআতে একটি রুকই হবে। ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, (প্রতি রাকাআতে) দু’টি রুকু হবে। তার দলীল হল ‘আইশা (রা.) বর্ণিত হাদীছ। আমাদের দলীল হল ইব্‌ন উমার
(রা.) বর্ণিত হাদীছ। আর যেহেতু (ইমামের সংগে ) নৈকট্যের কারণে বিষয়টি পুরুষদের কাছেই অধিকতর প্রকাশিত সেহেতু ইব্‌ন উমর (রা.) বর্ণিত রিওয়ায়াতই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। উভয় রাকাআতে (ইমাম) কিরাত দীর্ঘ করবেন। ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে (ইমাম)
নীরবে কিরাত পড়বেন। আর সাহেবাইনের মতে উচ্চৈস্বরে পড়বেন। ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর থেকে ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর অনুরূপ মতও বর্ণিত হয়েছে। কিরাত দীর্ঘ করার বক্তব্যটি উত্তম হিসাবে গণ্য। সুতরাং ইচ্ছা করলে ইমাম কিরাত সংক্ষিপ্ত করতে পারেন। কেননা,
সুন্নাত হল গ্রহণের সময়টিকে সালাত ও দু’আ দ্বারা পরিপূর্ণ করা। সুতরাং একটিকে সংক্ষিপ্ত করলে অন্যটিকে দীর্ঘ করবে। নীরবে এবং উচ্চৈস্বরে কিরাত পড়ার ব্যাপারে সাহেবাইনের দলীল হল ‘আইশা (রা.) বর্ণিত হাদীছ যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাতে উচ্চৈস্বরে
কিরাত পড়েছেন।
ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর দলীল হল ইব্‌ন ‘আব্বাস ও সমুরাহ ইব্‌ন জুন্দুর (রা.) এর রিওয়ায়াত। আর অগ্রাধিকারের প্রদানের কারণ পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আর কেন হবে না? এটা তো দিনের সালাত, আর দিনের সালাত হল নিশব্দ। সালাতের পর সূর্য গ্রহণ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত
দু’আ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যখন তোমরা এ ধরনের ভয়াবহ কোন অবস্থা দেখতে পাবে, তখন তোমরা দু’আর মাধ্যেমে আল্লাহর অভিমুখী হবে। আর দু’আসমূহের ক্ষেত্রে নিয়ম হল তা সালাতের পরে হওয়া। যে ইমাম জুমুআর সালাত পড়ান, তিনিই সালাতুল কুসুফ
পড়াবেন। তিনি উপস্থিত না হলে লোকেরা একা একা সালাত আদায় করবে। (ইমামতির জন্য কে অগ্রবর্তী হবে, এই) ফিতনা হতে বাচার জন্য। চন্দ্র গ্রহণের ক্ষেত্রে জামা’আত নেই। কেননা রাত্রিকালে সমবেত হওয়া কষ্টকর। কিংবা সংকট সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। আর প্রত্যেকে
একা একা সালাত আদায় করবে।কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- যখন তোমরা এই ধরনের ভয়ংকর কিছু দেখতে পাবে, তখন তোমরা সালাতের আশ্রয় গ্রহণ করবে। সূর্য গ্রহণের সালাত (জুমু’আর মত ) কোন খুতবা নেই। কেননা তা হাদীছে বর্ণিত হয়নি।

একনজরে নামাজে কিরাত-সুরা পাঠের বিধি-বিধান

নামাজে কিরাত-সুরা

একনজরে নামাজে কিরাত-সুরা পাঠের বিধি-বিধান :-
ইমাম হলে ফজরে এবং মাগরিবে ও ঈশার প্রথম দুই রাকাআতে উচ্চৈস্বরে কিরাত পড়বে এবং শেষ দুই রাকাআতে অনুচ্চৈস্বরে পড়বে। এটাই পরস্পরায় চলে এসেছে। আর যদি মু্নফারিদ হয় তা হলে সে ইচ্ছাধীন। চাইলে সে উচ্চৈস্বরে পাঠ করবে এবং নিজকে শোনাবে। কেননা নিজের ব্যাপারে
সে নিজের ইমাম। আর চাইলে চুপে চুপে পাঠ করবে।
ইমাম হলে ফজরে এবং মাগরিবে ও ঈশার প্রথম দুই রাকাআতে উচ্চৈস্বরে কিরাত পড়বে এবং শেষ দুই রাকাআতে অনুচ্চৈস্বরে পড়বে। এটাই পরস্পরায় চলে এসেছে। আর যদি মু্নফারিদ হয় তা হলে সে ইচ্ছাধীন। চাইলে সে উচ্চৈস্বরে পাঠ করবে এবং নিজকে শোনাবে। কেননা নিজের ব্যাপারে
সে নিজের ইমাম। আর চাইলে চুপে চুপে পাঠ করবে। কেননা, তার পিছনে এমন কেউ নেই, যাকে সে শোনাবে। তবে উচ্চৈস্বরে পাঠ করাই উত্তম। যাতে জামা’আতের অনুরূপ আদায় হয়। যুহর ও আসরে ইমাম কিরাত চুপে চুপে পড়বে। এমন কি আরাফাতে হলেও। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)
বলেছেন- দিবসের সালাত নির্বাক। অর্থাত্ তাতে শ্রুত কিরাত নেই। আরাফা সম্পর্কে ইমাম মালিক (র.) এর ভিন্নমত রয়েছে। আর আমাদের বর্ণিত হাদীছটি তার বিপক্ষে দলীল। আর জুমুআ ও দই ঈদে উচ্চৈস্বরে পাঠ করবে। কেননা উচ্চৈস্বরে পাঠের বর্ণনা মশহূর ভাবে চলে
এসেছে। দিবসে নফল সালাত চুপে চুপে পাঠ করবে। আর ফরজ সালাতের উপর কিয়াস করে রাত্রের সালাতে মুনাফারিদের ইখতিয়ার রয়েছে। কেননা, নফল সালাত হলো ফরযের সম্পূরক। সুতরাং (কিরাআতের বেলায়) নফল ফরযের অনুরূপ হবে।
যে ব্যক্তির ঈশার সালাত ফউত হয়ে যায় এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে, সে যদি উক্ত সালাতে ইমামতি করে তাহলে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে। এর সকালে জামা’আতের সাথে ফজরের সালাত কাযা করার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা.) যেমন করেছিলেন। আর যদি সে একা সালাত পড়ে, তাহলে অবশ্যই
নীরবে কিরাত পড়বে। (উভয় রকম পড়ার) ইখতিয়ার থাকবে না। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা উচ্চৈস্বরে কিরাত সম্পৃক্ত রয়েছে জামা’আতের সাথে অবশ্যম্ভাবীরূপে, কিংবা সময়ের সাথে স্বেচ্ছামূলকভাবে মুনাফারিদের ক্ষেত্রে। অথচ এখানে দু’টোর কোনটাই পাওয়া যায় নি। যে
ব্যক্তি ঈশার প্রথম দুই রাকা’আতে সূরা পাঠ করল কিন্তু সূরাতুল ফাতিহা পাঠ করেনি, সে শেষ দুই রাকাআতে তা দোহরাবে না। পক্ষান্তরে যদি সূরাতুল ফাতিহা পড়ে থাকে কিন্তু তার সাথে অন্য সূরা যোগ না করে থাকে, তাহলে শেষ দুই রাকাআতে ফাতিহা ও সূরা দুটোই
পড়বে এবং উচ্চৈস্বরে পড়বে। এটা ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ (র.)এর মত। তবে ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) বলেন, দুটোর মধ্যে কোনটাই কাযা করবে না। কেননা ওয়াজিব যখন নিজ সময় থেকে ফউত হয়ে যায়, তখন পরবর্তীতে বিনা দলীলে সেটাকে কাযা করা যায় না।
উল্লেখিত ইমামদ্বয়ের পক্ষে দলীল – যা উভয় অবস্থার পার্থক্যের সাথে সম্পৃক্ত যে, সূরাতুল ফাতিহাকে শরীআতে এমন অবস্থায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে যে, তার পরে সূরা সংযুক্ত হবে। সুতরাং যদি ফাতিহাকে শেষ দুই রাকাআতে কাযা করা হয় তাহলে তরতীবের দিক থেকে সূরার
পর সূরাতুল ফাতিহা এসে যাবে। অর্থাত্ এটা নির্ধারিত অবস্থানের বিপরীত। আর (প্রথম দুই রাকাআতে) সূরা ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা তা শরীআত নির্ধারিতরূপে কাযা করা সম্ভব।
উল্লেখ্য যে, এখানকার পাঠে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে (কাযা করা) ওয়াজিব হওয়া বুঝায়। আর মূল গ্রন্থের উল্লেখিত শব্দে মুস্তাহাব হওয়া বুঝায়। কেননা সূরার কাযা যদিও ফাতিহার পরে হচ্ছে তবু এ সূরা নিজ ফাতিহার সাথে সংযুক্ত হচ্ছে না। সুতরাং নির্ধারিত
অবস্থান সর্বাংশে বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর উভয়টিতে উচ্চৈস্বরে পাঠ করবে। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা একই রাকাআতে সরব ও নীরব পাঠ একত্র করা মানায় না। আর নফল তথা ফাতিহার মধ্যে পরিবর্তন আনা উত্তম। অনুচ্চৈস্বরে পাঠ হল যেন নিজে শোনতে পায়। আর উচ্চৈস্বরের
পাঠ হল অপরে শোনতে পায়। এ হল ফকীহ্ আবূ জা’ফর হিন্দওয়ানীর মত। কেননা, আওয়াজ ব্যতীত শুধু জিহবা সণ্চালনকে কিরাত বলা হয় না। ইমাম কারখী (র.) এর মতে উচ্চৈস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো নিজেকে শোনানো আর অনুচ্চৈস্বরের পরিমাণ হলো হরফের বিশুদ্ধ উচ্চারণ।
কেননা, কিরাত বা পাঠ মুখের কাজ, কানের কাজ নয়। কুদূরী গ্রন্থের শব্দে এর প্রতি ইংগিত রয়েছে।
তালাক প্রদান, আযাদ করা, ব্যতিক্রম যোগ করা ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণমূলক যাবতীয় মাসআলার মধ্যে মতপার্থক্যের ভিত্তি হল উক্ত নীতির পার্থক্যের উপর। সালাতে যে পরিমাণ কিরাত যথেষ্ট হয়, তার সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে এক আয়াত আর ইমাম
আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ (র.) এর মতে ছোট তিন আয়াত অথবা দীর্ঘ এক আয়াত। কেননা, এর চেয়ে কম পরিমাণ হলে তাকে কারী বলা হয় না। সুতরাং তা এক আয়াতের কম পাঠ করার সমতূল্য। ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর দলীল হলো, আল্লাহ তা’আলার বাণী- কুরআনের যতটুকু পরিমাণ সহজ
হয়, তা তোমরা পড়ো। এখানে (এক আয়াতে বা তার অধিকের মাঝে) কোন পার্থক্য করা হয়নি। তবে এক আয়াতের কম পরিমাণ (সর্বসম্মতিক্রমেই কুরআন গণ্য হওয়ার হুকুমের) বহির্ভূত। আর পূর্ণ আয়াত আয়াতের অংশবিশেষের সমার্থক নয়। আর সফরের সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন
সূরা ইচ্ছা হয় পড়বে। কেননা বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) তার সফরে ফজরের সালাতে ফালাক ও নাস সূরাদ্বয় পাঠ করেছিলেন। তাছাড়া সালাতের অর্ধেক রহিত করার ক্ষেত্রে সফরের প্রভাব রয়েছে। সুতরাং কিরাত হ্রাস করণের ব্যাপারে তার প্রভাব থাকা স্বাভাবিক।এ হুকুম
তখন, যখন সফরে তাড়াহুড়া থাকে। পক্ষান্তরে যদি (মুসাফির) স্থিতি ও শান্তির পরিবেশ থাকে, তাহলে ফজরের সালাতে সূরা বুরূজ ও ইনশাক্কা পরিমাণ সূরা পাঠ করবে। কেননা, এভাবে তাখফীক সহকারে সুন্নাতের উপরও আমল সম্ভব হয়ে যাবে।
মুকীম অবস্থায় ফজরের উভয় রাকাআতে সূরাতূল ফাতিহা ছাড়া চল্লিশ বা পণ্চাশ আয়াত পড়বে। চল্লিশ থেকে ষাট এবং ষাট থেকে একশ’ আয়াত পাঠ করার কথাও বর্ণিত রয়েছে। আর এ সব সংখ্যার সমর্থনে হাদীছ এসেছে। বর্ণনাগুলোর মাঝে সামঞ্জস্য বিধান এভাবে হতে পারে যে, (কিরাত
শ্রবণে) আগ্রহীদের ক্ষেত্র্রে একশ’ আয়াত এবং অলসদের ক্ষেত্রে চল্লিশ আয়াত এবং মধ্যমদের ক্ষেত্রে পণ্চাশ থেকে ষাট আয়াত পাঠ করবে। কারো কারো মতে রাত্র ছোট বড় হওয়া এবং কর্মব্যস্ততা কম-বেশী হওয়ার অবস্থা বিবেচনা করা হবে। ইমাম কুদূরী বলেন, যুহরের
নামাযেও অনুরূপ পরিমাণ পাঠ করবে। কেননা সময়ের প্রশস্ততার দিক দিয়ে উভয় সালাত সমান। মবসূত গ্রন্থে বলা হয়েছে- ‘কিংবা তার চেয়ে কম’। কেননা তা কর্মব্যস্ততার সময়। সুতরাং অনীহা এড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে ফজর থেকে কমানো হবে। আসর ও ‘ঈশা একই রকম। দু’টোতেই
আওসাতে মুফাসসাল পাঠ করবে। আর মাগরিবে তার চেয়ে কম অর্থাত্ তাতে ‘কিসারে মুফাসসাল’ পাঠ করবে। এ বিষয়ে মূল দলীল হলো আবূ মূসা আশ’আরী (রা.) এর নামে প্রেরিত উমর ইবন খাত্তাব (রা.) এর এই মর্মে লিখিত পত্র যে, ফজরে ও যুহরে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ পড়ো।
তাছাড়া মাগরিবের ভিত্তিই হলো দ্রুততার উপর। সুতরাং হালকা কিরাতই তার জন্য অধিকতর উপযোগী। আর আসর ও ‘ঈশায় মুস্তাহাব হলো বিলম্বে পড়া। আর কিরাত দীর্ঘ করলে সালাত দু’টি মুস্তাহাব ওয়াক্ত অতিক্রম করার আশংকা রয়েছে। সুতরাং এ দুই সালাতে আওসাতে মুফাসসাল
নির্ধারণ করা হয়। ফজরে প্রথম রাকাআতকে দ্বিতীয় রাকাআতের তুলনায় দীর্ঘ করবে, যাতে লোকদের জামা’আত ধরার ব্যাপারে সহায়ক হয়। ইমাম কুদূরী বলেন, যুহরের উভয় রাকাআত সমান। তা ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মত। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, সব সালাতেই
প্রথম রাকাআতকে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ করা আমার কাছে পসন্দনীয়। কেননা, বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) সব সালাতেই প্রথম রাকাআতকে অন্য রাকাআতের তুলনায় দীর্ঘ করতেন। প্রথমোক্ত ইমামদ্বয়ের দলীল এই যে, উভয় রাকাআতই কিরাতের সমান হকদার। সুতরাং পরিমাণের ক্ষেত্রেও
উভয় রাকাআত সমান হতে হবে। তবে ফজরের সালাত এর বিপরীত। কেননা, তা ঘুম ও গাফলাতের সময়। আর উদ্ধৃত হাদীছটি সানা, আউযুবিল্লাহ্ ও বিসমিল্লাহ্ পড়ার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। আর কম, বেশীর ক্ষেত্রে তিন আয়াতের কম ধর্তব্য নয়। কেননা অনায়াসে
এতটুকু কম-বেশী থেকে বেঁচে থাকা সম্ভবপর নয়। আর কোন সালাতের সহিত এমন কোন সূরা নির্দিষ্ট নেই যে, এটি ছাড়া সালাত জাইয হবে না। কেননা, আমরা পূর্বে যে আয়াত পেশ করেছি, তা নিঃশর্ত। বরং কোন সালাতের জন্য কুরআনের কোন অংশকে নির্ধারণ করে নেওয়া মাকরূহ।
কেননা, তাতে অবশিষ্ট কুরআনকে বর্জন করা হয় এবং বিশেষ সূরার ফযীলতের ধারণা জন্মে। মুক্তাদী ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ করবে না। সূরাতুল ফাতিহার ব্যাপারে ইমাম শাফিই (র.) এর ভিন্নমত রয়েছে। তার দলীল এই যে, কিরাত হলো সালাতের অন্যন্য রুকনের মত একটি
রুকন। সুতরাং তা পালনে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে শরীক থাকবেন।
আমাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর বাণী- যে ব্যক্তির ইমাম রয়েছে, সেক্ষেত্রে ইমামের কিরাত তার কিরাত রূপে গণ্য। এবং এর উপরই সাহাবীদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর কিরাত হলো উভয়ের মাঝে শরীকানামূলক রুকন। তবে মুক্তাদীর অংশ হলো নীরব থাকা ও মনোযোগসহ
শ্রবণ। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- (ইমাম) যখন কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা খামুশ থাকো। তবে ইমাম মুহাম্মদ (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, সতর্কতা অবলম্বন হিসাবে পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে তা মাকরূহ। কেননা এ সম্পর্কে
হুশিয়ারি রয়েছে। আর মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং নীরবে থাকবে। যদিও ইমাম আশা ও ভয়ের আয়াত পাঠ করেন। কেননা, নীরবে শ্রবণ ও নীরবতা আয়াত দ্বারা ফরজ সাব্যস্ত হয়েছে। আর নিজে পাঠ করা, কিংবা জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়া এ সকল এতে
বাধা সৃষ্টি করে। খুতবার হুকুমও অনুরূপ। তেমনি হুকুম নবী (সা.) এর উপর দুরূদ পাঠ করার সময়ও। কেননা, মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা ফরজ। তবে যদি খতীব এ আয়াত পড়েন- তখন শ্রোতা মনে মনে দুরূদ পড়বে। অবশ্য মিম্বর থেকে দূরের লোকদের সম্পর্কে আলিমগণের
মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে নীরব থাকার মধ্যে ইহতিয়াত রয়েছে, যাতে (কমপক্ষে) খামুশ থাকার ফরজ পালিত হয়। সঠিক বিষয় আল্লাহই উত্তম জানেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান

চেয়ারে বসে নামাজ আদায়

ইসলামের দৃষ্টিতে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করার বিধি-বিধান :
---
বর্তমানে প্রায় সব মসজিদেই অনেক মুসল্লিকে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। কিন্তু শরিয়তের বিধান অনুযায়ী চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করাটা সঠিক হচ্ছে কিনা সেটা তাদের অনেকেই জানেন না। অনেকের উজর-সমস্যা এতই মামুলি যে, এ ধরনের সমস্যার কারণে চেয়ারে
বসে নামাজ আদায় করাটা বৈধ হয় না, ফলে তারা যখন চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেন তখন তা সহি হয় না। একটু কষ্ট করে চেয়ার ছাড়াই তারা নামাজ আদায় করতে পারেন কিন্তু তারা সেটা না করে বরং চেয়ারে বসেই নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন। আর নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও নামাজ
সহি না হওয়ার কারণে তারা গোনাহগার হচ্ছেন। এজন্য এ সংক্রান্ত মাসআলা-মাসাইল বিজ্ঞ মুফতিদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেয়া একান্ত জরুরি। যাতে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ সহি-শুদ্ধ হয়। বক্ষমান নিবন্ধে সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করার প্রয়াস
পাব।
* কিয়াম তথা দাঁড়ানো নামাজের একটি ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। বিশেষত মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (বাকারা : ২৩৮)।
এ আয়াতে নামাজে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৭)। দাঁড়াতে সক্ষম হলে ফরজ, ওয়াজিব ও ফজরের সুন্নাত নামাজ দাঁড়িয়েই আদায় করতে হবে। এসব নামাজ বসে আদায় করলে সহি হবে না। (শামী ২/৫৬৫)। নফল নামাজ দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বসে আদায়
করা জায়েজ। (শামী বৈরোত, ২/৫৬৫)। তবে তাতে দাঁড়ানোর তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হয়। বিষয়টি একটি হাদিসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বসে নামাজ আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। রাসূল
(সা.) বললেন, কেউ যদি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে তাহলে তা তার জন্য উত্তম। আর বসে নামাজ আদায় করলে সে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার অর্ধেক সওয়াব পাবে। (বুখারি ১/১৫০ তিরমিযী ১/৮৫)। এ হাদিসটি নফল নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ দাঁড়াতে সক্ষম হলে ফরজ
ওয়াজিব নামাজ বসে আদায় করা জায়েজ নয়। ইমাম তিরমিযী জামি তিরমিযীতে হাদিসটি উল্লেখ করার পর লিখেন, কতক আলেম এ হাদিসটির মর্ম সম্পর্কে বলেছেন, এটি নফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হাসান বসরি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কেউ ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে নফল
নামাজ আদায় করতে পারবে। ‘বসে নামাজ আদায় করলে দাঁড়িয়ে আদায় করার তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হবে’ এ হাদিসটির ব্যাখ্যায় সুফিয়ান সাওরি বলেন, যে ব্যক্তি সুস্থ, যার কোনো উজর-সমস্যা নেই এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাদিসটি প্রযোজ্য। অর্থাৎ নফল নামাজের ক্ষেত্রে
কেউ কোনো অসুস্থতা বা উজরের কারণে বসে নামাজ আদায় করলে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের সমান সওয়াবই পাবে। সুফিয়ান সাওরির এ বক্তব্যের মতো বক্তব্য কিছু হাদিসেও পাওয়া যায়। (তিরমিযী ১/৮৫)। হজরত হাফসা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর ইন্তিকালের এক বছর আগ পর্যন্ত
আমি তাকে নফল নামাজ বসে আদায় করতে দেখিনি। ওফাতের এক বছর আগে তিনি (মাঝে মাঝে) নফল নামাজ বসে আদায় করতেন। সূরা পড়তেন স্পষ্ট করে। ধীরে ধীরে। কেরাত হতো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। (তিরমিযী ১/৮৫)। দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নফল নামাজ বসে পড়লে জমিনে
বসেই পড়তে হবে। চেয়ারে বসে পড়লে নামাজ সহি হবে না। জমিনে বসে হাঁটু বরাবর মাথা ঝুঁকিয়ে রুকু করতে হবে। সিজদা করতে সক্ষম হলে জমিনেই সিজদা করতে হবে। (খানিয়া ১/১৭১)।
যিনি দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু নিয়ম মতো রুকু সিজদা করতে অক্ষম, রুকু সিজদা করতে মারাত্মক কষ্ট হয় বা রোগ বেড়ে যায় অথবা রোগ সারতে বিলম্ব হবে এ ধরনের লোক দাঁড়িয়ে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে নামজ আদায় করলে নামাজ সহি
হবে না। কারণ, নামজে কিয়াম বা দাঁড়ানো একটি ফরজ, অপারগতা ছাড়া তা বাদ দিলে নামজ সহি হবে না। (বদায়েউস সানায়ে ১/১০৭, মাজমাউল আনহুর ১/২২৯, তাবইনুল হাকায়েক ১/৪৯২)।
* কেউ যদি কোনো কিছুর ওপর ভর করে, হেলান দিয়ে টেক লাগিয়ে দাঁড়াতে পারেন সোজা দাঁড়াতে পারেন না তাহলে তিনি কিছুর ওপর ভর করে ঠেক লাগিয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে ফরজ ওয়াজিব ও ফজরের সুন্নাত নামজ আদায় করলে সহি হবে না। (ফাতহুল
কাদির ২/৩, শামী বৈরোত ২/৫৬৭)।
* যিনি কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারেন বেশি সময় দাঁড়াতে পারেন না। তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করবেন। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন। যখন কষ্ট হবে জমিনে বসে বাকি নামাজ আদায় করবেন। রুকু সিজদা নিয়ম মতো করবেন। এমতাবস্থায় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে
নামাজ সহি হবে না। যেমন একজন মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে পারে না, ফজরের নামাজে দীর্ঘ কেরাত পড়া হয় তিনি যদি জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করেন তাহলে দাঁড়িয়ে শুরু করবেন যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়াবেন। যখন কষ্ট হবে, জমিনে বসে পড়বে। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে
পারবেন না। ( ফতাহুল কাদির ২/৩। শামী বৈরোত ২/৫৬৭।
* যারা দাঁড়াতে এবং রুকু সিজদা করতে অক্ষম, তারা জমিনে যেভাবে বসতে সক্ষম সেভাবে বসেই নামাজ আদায় করবেন। চেয়ারে বসে আদায় করলে নামজ সহি হবে না। জমিনে বসে ইশারায় রুকু সিজদা করতে হবে। হাঁটু বরাবর মথা ঝুঁকিয়ে ইশারায় রুকু এবং আরেকটু বেশি ঝুঁকিয়ে
সিজদা করতে হবে। (বদায়েউস সানায়ে ১/২৮৪)। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে যারা দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং বলে হে আমাদের প্রতিপালক তুমি এটা অনর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র,
আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। (আলইমরান, ১৯১)। কুরতুবি বলেন, হাসান বসরিসহ আরও কয়েকজন মুফাসসির বলেছেন, আয়াতটি নামাজ সম্পর্কে অর্থাৎ (বুদ্ধিমান তারা) যারা নামাজ নষ্ট করে না। উজর হলে বসে বা শুয়ে হলেও নামাজ আদায় করে। সুতরাং আয়াত
থেকে জানা গেল, নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে এবং তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। (তাফসিরে কুরতুবি ৪/১৯৮)। মাবসূতে সারাখসিতে রয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছে এ আয়াত- ‘যারা দাঁড়িয়ে
বসে এবং শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে’ (আল ইমরান ১৯১)। এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে যাহহাক বলেন, আয়াতটি হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী নামাজ আদায়ের বিবরণ। (মাবসূতে সারাখসি ১/২১২)। অপর একটি আয়াতে রয়েছে, ‘দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ
করবে। (নিসা : ১০৩)। এ আয়াতে আল্লাহকে স্মরণ করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য নামাজ। অর্থাৎ তোমরা নামাজ আদায় কর। (বাদায়ে ১/২৮৪)। একটি হাদিসে বিষয়টির সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)
কে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে। তা সম্ভব নাহলে বসে আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করবে। (বুখারি ১/১৫০, তিরমিযী, ১/৮৫, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)। এ হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট
বুঝে আসে, দাঁড়ানো সম্ভব না হলে তখনই কেবল বসে নামাজ আদায় করা যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়ানো সম্ভব ততক্ষণ জমিনে বা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে সহি হবে না। উজরের কারণে হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে ফরজ নামাজও বসে আদায় করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, যে অসুস্থতায় রাসূলে (সা.) ইন্তেকাল করেন সে অসুস্থতার সময় তিনি আবু বকর (রা.) এর পেছনে বসে নামাজ আদায় করেছেন। (মুসলিম, ১/১৭৭, তিরমিযী ১/৮৩)।
* যিনি জমিনে স্বাভাবিকভাবে বসতে পারেন না কিছুর সঙ্গে ঠেক লাগিয়ে বসতে পারেন তিনি কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেক লাগিয়ে জমিনে বসেই নামাজ আদায় করবেন। যেমন মসজিদের পিলার, দেয়াল, ফ্লাটচেয়ার বালিশ ইত্যাদির সঙ্গে ঠেক লাগিয়ে জমিনে বসেই নামাজ আদায় করবেন। চেয়ারে
বসে আদায় করলে নামজা সহি হবে না। (শামী ২/৫৬৫)।
* হাঁটুতে সমস্যার কারণে অনেকে হাঁটু ভাঁজ করতে পারেন না। এ ধরনের লোকের পক্ষে যদি পশ্চিম দিকে পা ছড়িয়ে জমিনে বসে সম্ভব হয় তাহলে তারা সেভাবেই নামাজ আদায় করবেন। যদি তাও সম্ভব না হয়, কোনোভাবেই তারা জমিনে বসতে না পারেন তাহলে তখনই কেবল চেয়ারে বসে
নামাজ আদায় করা যাবে। তখন চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন। সিজদার জন্য রুকুর তুলনায় অধিক মাথা ঝুঁকাতে হবে। যদি কেউ কোনোভাবেই বসতে না পারেন তাহলে তিনি চিৎ হয়ে শুয়ে নামাজ আদায় করবেন। পশ্চিম দিকে পা ছড়িয়ে দেবেন। ইশারায় রুকু
সিজদা করবেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে পশ্চিমদিকে পা না দিয়ে বরং হাঁটু সোজা করবেন এবং মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দেবেন। যাতে অন্তত কিছুটা বসার মতো হয় এবং চেহারা আকাশের দিকে না হয়ে কিবলামুখী হয়। (শামী, বৈরোত, ২/৫৬৯)।
সারকথা
রুকু সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তি দাঁড়াতে সক্ষম হলে দাঁড়িয়ে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে অক্ষম হলে জমিনে বসা সম্ভব হলে জমিনে বসেই নামাজ আদায় করতে হবে। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে সহি হবে না। যিনি কোনোভাবেই জমিনে বসতে পারেন
না তিনি চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন।

Tuesday, November 21, 2017

নামাজের নিয়ম

নামাজের নিয়ম

ফরজ নামাজ
দৈনন্দি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ । (১) ফজরের দুই রকাত। (২) জোহরের চার রাকাত। আর জুমার দিন জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত। (৩) আছরের চার রাকাত। (৪) মাগরিবের তিন রাকাত। (৫) এশার চার রাকাত ।
নামাজের ওয়াক্ত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয়, হাদীসে পাকে তার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে। এসকল হাদীসের আলোকে বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নামাজের সময় সূচীর চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেস হয় এসকল ক্যালেন্ডার থেকে আমরা যেনে নিতে পারি ।
ফরয নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়
পবিত্রতা অর্জ করে নামাজের নিয়্যত করবে। আপনি কোন নামাজ পড়ছেন মনে মনে এতটুকু থাকাই নিয়্যতের জন্য যথেষ্ট। তবে তার সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। তারপর ক্বিবলামুখি হয়ে দাড়াবে, দুই পায়ের গুড়ালি বরাবর থাকবে এবং দুই পায়ের মাঝে চার আংগুল পরিমাণ ফাকা থাকবে। তারপর তাকবীরে তাহ্রীমা অর্থাৎ
الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে।, এ ক্ষেত্রে হাতের আংগুলগুলো সাভাবিক অবস্থায় ক্বিবলা মুখি থাকবে আর উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি বরাবর থাকবে। তারপর হাত নামিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বরা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কবজি ধরবে আর বাকী আঙ্গুলগুলো বাম হাতের উপর রাখবে। অতঃপর নাভির নিচে বাধবে। দাড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে সেজদার জায়গায় । তারপর ছানা পড়বে
سبحانڪ اللهم وبحمدڪ وتبارڪ السمڪ وتعالى جدڪ ولا اله غي
উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলাইলাহা গইরুকা
অর্থঃ হে আল্লাহ পবিত্রতা তোমোর , প্রশংসা তোমার, তোমার নাম সর্বউচ্চে, তোমার শক্তি মহান, তুমি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই।
তারপর اعوذ بالله من الشيطن الرجيم (উচ্চারণঃ আয়ুজু বিল্লাহি মিনাশ্শাই ত্বর্নিরজীম। অর্থঃ বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) পড়বে এবং بسم الله الرحمن الرحيم (উচ্চারণঃ বিসমিল্লার্হিরহমার্নিরহীম। অর্থঃ পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি) পড়বে।
তারপর সূরা ফাতেহা الحمد لله رب العلمين الرحمن الرحيم مالڪ يوم الدين اياڪ نعبد و اياڪ نستعين اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم غيرالمغصوب غليهم و لا الضلين পড়বে।
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম। অলাদ্দল্লিন।
অর্থঃ (১) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা। (২) যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। (৩) যিনি বিচার দিনের মালিক। (৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র সাহায্য প্রার্থনা করি। (৫) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, (৬) সে সমস্ত লোকদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। (৭) তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে।
তারপর কোআনে কারীম থেকে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। যেমন ফীল।
الم تر ڪيف فعل ربڪ باصحب الفيل الم يجعل ڪيد هم في تضليل و ارسل عليهم طيرا ابابيل ترميهم بحجارة من سجيل فجعلهم ڪعصف مآ ڪول
উচ্চারণঃ আলামতার কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বিআছহাবিল ফীল । আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফী তাদলীল। অআরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিীল। তারমীহিম বিহিজারতিম মিনসিজ্জীল। ফাজাআলাহুম কাআসফিম মাকূল।
অর্থঃ (১) আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন ? (২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি ? (৩) তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী, (৪) যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করেছিল। (৫) অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।
তারপর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে, হাতের আংগুলগুলো ফাকা রেখে দুই হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ভালভাবে আকড়ে ধরবে। এবং মাথা, পিঠ ও মাজা সমান থাকবে কোন উঁচু নিচু থাকবে না। রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে। তারপর রুকুর তাসবীহ পড়বে।
سبحان ربي العظيم উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম। অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র।
তিন বার পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে। তারপর سمع الله لمن حمده (উচ্চারণঃ সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদাহ । অর্থঃ যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার প্রশংসা শুনেন।) বলে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে। তারপর الله اڪبر বলে সেজদায় যাবে । সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাতে হাটু ধরে সর্বপ্রথম উভয় হাটু একত্রে জমীনে রাখবে। তারপর হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো অবস্থায় দুই হাত জমীনে একত্রে রাখবে। এবং চেহারার চওড়া অনুযায়ী দুই হাতের মাঝে ফাঁকা রাখবে।তারপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করবে প্রথমে নাক তারপর কপাল রাখবে উভয় হাতের শধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের বরাবরে নাক রাখবে । নজর নাকের উপর রাখবে । পুরুষের পেট রান থেকে বাহু পাজর থেকে হাতের কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে। পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করে রাখবে এবং দুই পায়ে গুড়ালি মিলিয়ে না রেখে বরং টাকনু কাছা কাছি রাখবে। যথা সম্ভব পায়ের আঙ্গুলগুলো জমীনের সাথে চেপে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ক্বিবলার দিকে রাখবে। সেজদার মধ্যে তিন বার سبحان ربي الاعلى পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে।
(উচ্চারণঃ সুবহানা রব্বিয়াল আয়লা । অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক মহা পবিত্র।) তিনবার সাতবারও পড়তে পারবে।
তারপর الله اڪبر বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। প্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠাবে। তারপর বাম পা জমীনে বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর ডান পা দার করিয়ে রাখবে । পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে জমীনে রাখবে। দুই হাত উভয় রানের উপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা রেখে আঙ্গুলের মাথার অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে। তারপর اللهم اغفرلى ارحمني وارزقني واهدنى পড়বে। তারপর الله اڪبر বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে। দ্বিতীয় সেজদা শেষ করে আবার الله اڪبر বলে সেজদা থেকে সুজা দাড়িয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয় রাকাতেও ঠিক প্রথম রাকাতের মতই । প্রথম সূরা ফাতেমা পড়বে । তারপর بسم الله الرحمن الرحيم পড়ে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। যেমন সূরা ফীল
لايلف قريش الفهم رحلة الشتاء والصيف فليعبدوا رب هذا البيت الذي اطعمهم من جوع و امنهم من خوف
উচ্চারণঃ লইিলাফী কুরাশনি ইলাফিহিম রিহলাতাশশিতাই অছছইফ ফালইয়াবদু রব্বা হাজাল বাইত আল্লাজি আতআমাহুম মিনজু অআমানাহুম মিন খউফ
অর্থঃ (১) কোরায়েশের আসক্তির কারণে, ৯২) আসক্তির কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের। (৩) অতএব তারা যেন এবাদত করে এই ঘরের পালনকর্তার । (৪) যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে রিাপদ করেছেন।
তারপর প্রথম রাকাতের মতই রুকু সেজদা করবে। দুটি সেজদা শেষ করে দুই সেজদার মাঝে বসার ন্যায় বসবে এবং দুই হাত রানের উপর হাটু বরারব রাখবে । আর দৃষ্টি থাকবে কোলের দিকে। তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে।
التحيات لله و الصلوات والطيبات السلام عليڪ ايها النبي ورحمة الله وبرڪاته السلام علينا وعلي عباد الله الصلحين اشهد الا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি অছ্ছলাওয়াতু অত্তয়্যিাবাতু আস্সালা মু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহু আস্সালামু আলানা অআলা ইবাদিল্লাহিছ্ছলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহু।
অর্থঃ “মৌখিকভাবে পেশকৃত যাবতীয় সম্মান ও অভিবাদন, শরীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিবেদিত । হে নবী! আপনার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি রহমত ও বর্কত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি বর্ষিত হোক । আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং এও সাক্ষ দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।”
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে এবং اشهد الا اله বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি উঠাবে الا الله বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। বাকী দুটি আঙ্গুল তালুর সাথে মিলিয়ে রাখবে।
নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে তাশাহ্হুদের পরে দরুদে ইব্রাহীম পড়বে।
اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ শান্তি বর্ষণ কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার বর্গের উপর । যেমনি ভাবে শান্তি বর্ষণ করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার বর্গের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত ও হে আল্লাহ বরকত দান কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার পরিজনের উপর। যেমনি বরকত দান করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার পরিজনের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত ও
তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।
اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। তুমি ব্যতীত কেউ ক্ষমাশীল নেই অতএব তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
তাপর السلام عليڪم ورحمة الله ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফিরাবে । প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে। সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁেধর দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে। ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশÍাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশÍাদের ।
আর যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাতের পর যে বৈঠক হবে তাহবে প্রথম বৈঠক। এই প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে কিন্তু কোন সূরা মিলাবে না। তৃতীয় রাকাত শেষ করে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পরে সালাম ফিরাবে।
নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়বে তারপর আরো দুই রাকাত পড়বে।আর এই দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়বে, কোন সূরা মিলাবে না। চতুর্থ রাকাতের পরে শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।
ওয়াজিব নামাজ
বিতর ও দুই ঈদের নামাজ হলো ওয়াজিব।
বিতরের নামাজ তিন রাকাত। বিতরের নামাজের ওয়াক্ত হলো, এশার নামজ আদায় করার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত । এ ওয়াক্তের মধ্যে যে কোন সময় বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। যদি শেষ রাতে জাগার অভ্যাস থাকে তাহলে শেষ রাতে বিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম । আর জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস না থাকলে ঘুমানোর আগেই বিতরের নামাজ আদায় করে নিবে ।
বিতরের নামাজ যেভাবে পড়তে হয়
বিতরের নামাজের তিনো রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা মিলানো ফরজ। আর তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর الله اڪبر বলে কান বরাবর হাত উঠিয়ে আবার নাভীর নিচে হাত বেধে দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
اللهم انا نستعينڪ و نستغفڪ ونؤمن بڪ و نتوڪل عليڪ ونثني عليڪ الخير و نشڪرڪ ولا نڪفرڪ و نخلع ونترڪ من يفجرڪ اللهم اياڪ نعبد ولڪ نصلي و نسجد واليڪ نسعي و نحفد ونرجو رحمتڪ و نخشي عذابڪ ان عذابڪ بالڪفار ملحق
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ,অনাসতাগফিরুকা,অনু-মিনুবিকা, অনাতাঅক্কালু আলাইকা, অনুসনী আলাইকাল খইরা , অনাশকুরুকা , অলানাকফুরুকা, অনাখলা’ ণাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু , অলাকানুছল্লি, অনাসজুদু, অইলাইকা নাসআ, অনাহফিদু, অনারজু রহমাতাকা, অনাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক।
অর্থঃ “হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি । আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করছি । আপনার কাছে ক্ষমার আবেদন করছি । আপনার কাছে তওবা করছি । আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি । আপনার উপর ভরসা করছি । আপনার সকল কল্যাণের প্রশংসা করছি । আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আমরা আপনার অনুগ্রহ অস্বীকার করি না । আমরা পৃথক চলি । এবং পরিত্যাগ করি এমন লোকদের, যারা আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে । “হে আল্লাহ ! আমরা আপনারই ইবাদত করি । এবং আপনারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা নামাজ পড়ি ও সিজদা করি । আপনার প্রতিই আমরা ধাবিত হই এবং আমরা আপনার আযাবকে ভয় করি । নিশ্চাই আপনার প্রকৃত আযাব কাফেরদের উপর পতিত হবে । আল্লাহ তা‘আলা নবী সা.-এর প্রতি ও তার পরিবার পরিকনের প্রতি রহমত বর্ষকরুন এবং তাকে শান্তিতে রাখুন ।
তারপর বিতরের নামাজের বাকী নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই।
একনজরে কাজা নামাজের বিধি-বিধান!
কারো যদি কোন নামায কাযা হয়ে যায়, তবে যখনই স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেবে এবং ওয়াক্তিয়া নামাযের উপর তাকে অগ্রবর্তী করবে। এ বিষয়ে মূলনীতি এই যে, ওয়াক্তিয়া ফরয় নামায ও কাযা নামাযসমূহের মাঝে তারবীত বা ক্রমে রক্ষা করা আমাদের ওয়াজিব।

কারো যদি কোন নামায কাযা হয়ে যায়, তবে যখনই স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেবে এবং ওয়াক্তিয়া নামাযের উপর তাকে অগ্রবর্তী করবে। এ বিষয়ে মূলনীতি এই যে, ওয়াক্তিয়া ফরয় নামায ও কাযা নামাযসমূহের মাঝে তারবীত বা ক্রমে রক্ষা করা আমাদের ওয়াজিব। আর ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতে তা মুসতাহাব। কেননা প্রতিটি ফরজ নামায নিজস্ব ভাবে সাব্যস্ত। সুতরাং অন্য ফরযের জন্য তা শর্ত হতে পারে না। আমাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর বাণী- যে ব্যক্তি নামাযের সময় ঘুমিয়ে যায় অথবা নামাযের কথা ভুলে যায় আর তা ইমামের সাথে নামাযে শরীক হওয়ার পরই শুধু মনে পড়ে, সে যেন নামায আরম্ভ করেছে তা পড়ে নেয়। এরপর যে নামাযের কথা মনে পড়েছে, তা পড়ে নেবে এরপর ইমামের সাথে যে নামায আদায় করেছে, তা পুনরায় পড়ে নেবে। যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তবে ওয়াক্তিয়া নামায আগে পড়ে নেবে এরপর কাযা নামায আদায় করবে। কেননা সময় সংকীর্ণতার কারণে, তেমনি ভুলে যাওয়ার কারণে এবং কাযা নামায বেশী হওয়ার কারণে তারতীব রহিত হয়ে যায়, যাতে ওয়াক্তিয়া নামায ফউত হয়ে যাওয়ার উপক্রম না হয়ে পড়ে। যদি কাযা নামাযকে আগে পড়ে নেয় তবে তা দুরস্ত হবে। কেননা তা আগে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে অন্যের কারণে। (কাযা নামাযের নিজস্ব কোন কারণে নয়) পক্ষান্তরে যদি সময়ের মধ্যে প্রশস্ততা থাকে এবং ওয়াক্তিয়া নামাযকে অগ্রবর্তী করে তবে তা জাইয হবে না। কেননা হাদীছ দ্বারা উক্ত নামাযের জন্য যে ওয়াক্ত সাব্যস্ত হয়েছে, তার পূর্বে সে তা আদায় করেছে।
যদি কয়েক ওয়াক্ত নামায ফউত হয় তবে মুলতঃ নামায যে তারতীবে ওয়াজিব ছিল, কাযা নামাযও সে তারতীবে আদায় করবে। কেননা খন্দকের যুদ্ধে নবী (সা.) এর চার ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছিলো, তখন তিনি সেগুলো তারতীবের সাথে কাযা করেছিলেন। তারপর বলেছিলেন- আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখেছো, সেভাবে তোমারও সালাত পড়ো। তবে যদি কাযা সালাত হয় ছয় ওয়াক্তের বেশী হয়ে যায়। কেননা কাযা সালাত বেশী পরিমাণে হয়ে গেছে; সুতরাং কাযা সালাতগুলোর মাঝেও তারতীব রহিত হয়ে যাবে, যেমন কাযা সালাত ও ওয়াক্তিয়া সালাতের মাঝে রহিত হয়ে যায়। আধিক্যের পরিমাণ হলো কাযা নামায ছয় ওয়াক্ত হয়ে যাওয়া। অর্থাত্ ষষ্ঠ নামাযের ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়া। জামেউস সাগীব কিতাবের নিম্নোক্ত ইবারতের অর্থ এটাই। যদি একদিন একরাত্রের অধিক নামায কাযা হয়ে যায়, তাহলে যে ওয়াক্তের নামায প্রথমে কাযা করে তা জাইয হবে। কেননা একদিন একরাত্রের অধিক হলে নামাযের সংখ্যা ছয় হয়ে যাবে। ইমাম মুহাম্মদ (র.) হতে বর্ণিত যে, তিনি ষষ্ঠ ওয়াক্ত দাখিল হওয়ার বিষয় বিবেচনা করেছেন। তবে প্রথমোক্ত মতটিই বিশুদ্ধ। কেননা পুনঃ আরোপিত হওয়ার সীমায় উপনীত হওয়া দ্বারা আধিক্য সাব্যস্ত হয়। আর তা প্রথমোক্ত সুরতে রয়েছে। যদি পূর্বের ও সাম্প্রতিক কাযা সালাত একত্র হয়ে যায়, তবে কোন কোন মতে সাম্প্রতিক কাযা সালাত স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্তিয়া সালাত আদায় করা জাইয হবে। কেননা কাযা সালাত অধিক হয়ে গেছে। কোন কোন মতে জাইয হবে না এবং বিগত কাযা নামাযগুলোকে ‘যেন তা নেই’ ধরে নেয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে সে এ ধরনের অলসতা থেকে সতর্ক হয়।
যদি কিছু কাযা সালাত আদায় করে ফেলে এবং অল্প পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, তবে কোন কোন ইমামের মতে ‘তারতীব’ পুনঃ আরোপিত হবে। এই মতই অধিক প্রবল। কেননা ইমাম মুহাম্মদ (র) হতে বর্ণিত আছে যে, যদি কেউ একদিন ও এক রাত্রের নামায তরক করে আর পরবর্তী দিন প্রতি ওয়াক্তিয়া সালাতের সাথে এক ওয়াক্তের কাযা সালাত আদায় করতে থাকে, তবে কাযা সালাতগুলো সর্বাবস্থায় জাইয হবে। পক্ষান্তরে ওয়াক্তিয়া সালাত যদি (কাযা সালাতের) আগে আদায় করে, তবে তা ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা, কাযা নামাযগুলো অল্প এর গণ্ডিতে এসে গেছে। আর যদি ওয়াক্তিয়াকে (কাযা নামাযের) পরে আদায় করে, তবে একই হুকুম হবে। কিন্তু পরবর্তী ‘ঈশার নামাযের হুকুম ভিন্ন (অর্থাত্ আদায় হয়ে যাবে)। কেননা তার ধারণা মতে তো ‘ঈশার সালাত আদায় করার সময় তার যিম্মায় কোন কাযা সালাত নেই। যুহর আদায় করেনি, একথা স্মরণ থাকা অবস্থায় কেউ যদি আসরের সালাত পড়ে, তবে তা ফাসিদ হবে। কিন্তু একেবারে শেষ ওয়াক্ত স্মরণ থাকা অবস্থায় পড়ে থাকলে ফাসিদ হবে না। এটা তারতীব সংক্রান্ত মাসআলা। অবশ্য ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে (উক্ত আসরের নামাযের) ফরজগুণ নষ্ট হয়ে গেলেও মূল নামায বাতিল হবে না)। বরং নফল রূপে গণ্য হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে মূল নামাযও বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ‘ফরযিয়াতের’ জন্যই তাহরীমা বাধা হয়েছিল। সুতরাং ফরযিয়াত যখন বাতিল হয়ে গেল, তখন মূল তাহরীমাও বাতিল হয়ে যাবে।
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর দলীল এই যে, তাহরীমা বাধা হয়েছে মূলতঃ সালাতের জন্য ফারযিয়াতের গুণ সহকারে, সুতরাং ফরযিয়াতের গুণ বিনষ্ট হওয়ার কারণে মূল সালাত বিনষ্ট হওয়া জরুরী নয়। তবে আসর ফাসিদ হবে স্থগিতাবস্থায়, অতএব যদি যুহরের কাযা আদায় না করে ধারাবাহিক ছয় ওয়াক্ত নামায পড়ে ফেলে তবে সব ক’টি ওয়াক্তের নামাযই জাইয রূপান্তরিত হয়ে যাবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মত। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ (র.) এর মতে চূড়ান্ত ভাবেই তা ফাসিদ হয়ে যাবে। কোন অবস্থাতেই তা পুনঃবৈধতা পাবে না। এ বিষয়ে যথাস্থানে আলোচিত হয়েছে। ‘বিতর পড়েনি’ একথা স্মরণে থাকা অবস্থায় কেউ যদি ফজরের নামায আদায় করে, তবে তা ফাসিদ হয়ে যাবে। এটা আবূ হানীফা (র.) এর মত। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। এ মতভিন্নতার ভিত্তি এই যে, ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে বিতর হল ওয়াজিব। পক্ষান্তরে সাহেবাইনের মতে তা সুন্নত। আর সুন্নত ও ফরজ নামাযসমূহের মাঝে তারতীব জরুরী নয়। বিতরের ব্যাপারে এই মতপার্থক্যের ভিত্তিতেই (এ মাসআলা রয়েছে)। কেউ যদি ‘ঈশার নামায পড়ার পর পুনরায় উযূ করে সুন্নত ও বিতর আদায় করেন। অতঃপর প্রকাশ পেল যে, ‘ঈশার সালাত সে বিনা উযূতে পড়েছে, তবে আবূ হানীফা (র.) এর মতে শূধু ‘ঈশা ও সুন্নত পুনঃআদায় করবে, বিতর নয়। কেননা তার মতে বিতর স্বতন্ত্র ফরজ আর সাহেবাইনের মতে বিতরও পুনঃ আদায় করতে হবে। কেননা তা ‘ঈশা’ এর অনুবর্তী। আল্লাহই উত্তম জানেন।
দুই ঈদের নামাজ
অন্যান্য নামাজের সাথে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো , দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলতে হয়। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় দুই হাত কান বরাবর উঠিয়ে নাভীর নিচে না বেধে নিচের দিকে ছেড়ে দিবে। তিনটি তাকবীর বলা শেষ হলে নাবীর নিচে হাত বাধবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে একই নিয়মে তারপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। বাকী সব নিয়ম অন্য নামাজের মতই।
সুন্নত নামাজ
(১)ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(২) জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজআদায় করা সুন্নত।
(৩) জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৪) মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৫) এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।
সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
সুন্নত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে হবে আর বাকী সকল নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। সুন্নত নামাজ যদি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম ।
জামা আতের সাথে নামাজ আদায় করলে মুক্তাদিগনের করণীয়
ইমামের পিছনে যারা ইক্তেদা করে তাদেরকে মুক্তাদি বলে । ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করার নিয়্যত করতে হবে তা ছাড়া নামাজ আদায় হবে না । মুক্তাদিগন ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর বলে কান বরাবর হাত উঠাবে । তারপর নাভীর নিচে হাত বাঁধবে । তারপর ছানা পড়ে চুপ করে ইমাম ক্বেরাত একাগ্র চিত্তে শুনতে থাকবে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বেরাত পড়ে তাহলে আল্লাহ পাকের প্রতি মনোনিবেশ করে দাড়িয়ে থাকবে । ইমাম যখন রুকু সেজদার জন্য তাকবীর বলবে মুক্তাদিগনও অনুচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলে ইমামসাহেবকে অনুরণ করবে । ইমাম সাহেব যখন সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠবে মুক্তাগণ তখন রাব্বানা লাকালহামদু বলে ইমামের পরে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে
প্রত্যেক রুকু সেজদায় মুক্তাদিগণও রুকু সেজদার তাসবীহ পড়বে । এবং প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়বে এবং দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহ্হুদ দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়বে । তারপর ইমামের সালামের সাথে সালাম ফিরাবে। ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত করবে ডান পাশের মুসুল্লি ও ফেরেশÍাদের ও ইমাম ডানে থাকলে ইমামের আর বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত করবে বাম পাশের মুসুল্লি ফেরেশÍার এবং বামে ইমাম থাকলে ইমামের
মহিলাদের নামাজ
মহিলাদের নামাজের নিয়ম প্রায় পুরুষের নামাজের মতই। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যাবধান আছে তা হলো, দাড়ানো অবস্থায় দুই পা মিলিয়ে রাখবে । তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মহিলারা কাধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। তারপর বুকের উপর হাত বাধবে বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখবে । রুকুতে পুরুষের মত উভয় হাতে হাটুতে ভাল করে ধরবে না বরং দুই হাতের আংগুল মিলিত রেখে হাটুকে স্পর্স করবে এবং দুই পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখবে । পুরুষের রুকুর মত মাথা পিঠ ও মাজা সমান হবে না । সেজদার মাঝে মহিলারা দুই পা বাম দিক দিয়ে বের করে ডান নিতম্বের উপর বসবে তারপর হাত জমীনে বিছিয়ে সেজদা করবে। পেট রানের সাথে মিলিয়ে বাহু পাজরের সাথে মিলিয়ে এবং হাতের কনুই জমীনের সাথে মিলিয়ে যথা সম্ভব জমীনের সাথে চেপে ধরে সেজদা করবে । বসার সময় দুই পা বাম দিকে বের করে দিয়ে ডান নিতম্বের উপর বসবে। মহিলাদের নামাযের বাকী নিয়ম পুরুষের নামাযের মতই।

বিশেষ নামাজ

বিশেষ নামাজ

বিশেষ নামাজ:
• তাহাজ্জুদের নামাজ :-
এশা'র পর এবং ফজরের আগে এই নামাজ পড়তে হয়।
• ফরজ নামজের পরে সকল নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার নামাজ হল তাহাজ্জুদ এর নামাজ। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হল যারা যত্নের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে। কুরআন শরীফে “আলিফ লাম মিম সিজদা” এ খাঁটি ও নিষ্ঠাবান মুমিনদের একটি গুন বর্ণনা করে বলা হয়েছে- “অর্থ – তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা হতে আলাদা থাকে”। অধিকাংশ মুফাচ্ছিরদের মতে এখানে বলা হয়েছে যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পরে। ইবনে কাছিরে বলা হয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এইসব লোকদের দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হবে। এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতে পৌঁছে দিবেন। এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে নামাজ পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়। নফল নামাজের মধ্যে এই প্রকার নফল অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। এশার নামাজের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় কিন্তু শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজ ২রাকাত হতে ১২ রাকাত।কিন্তু রাসুল (সাঃ) ৮ রাকাত পরতেন বিধায় এটাকে উত্তম মনে করা হয়। পারলে ৮ রাকাত অথবা না পারলে ৪ রাকাত অথবা তাও হিম্মত না হলে কমপক্ষে ২ রাকাত পরবে।
• তাহাজ্জুদ নামাজ এর নিয়াতঃ
"আমি কেবলামুখি হইয়া তাহাজ্জুদ এর দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়িবার নিয়াত করছি"
• নামাজ এর নিয়মঃ
তাহাজ্জুদ এর নামাজ ২ রাকাত করে পড়তে হয়।প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে ৩ বার করে সুরা ইখলাস পড়তে হয়।নামাজের বাকি নিয়ম অন্য সব নামাজের মতোই।
• তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্তঃ
• তাহাজ্জুদের গুরুত্ত অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস শরীফে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হলো মুহাররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাযের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ’ (তাহাজ্জুদের নামাজ)। তাহাজ্জুদগুজার বান্দাহ্দের অগ্রগতির স্বীকৃতি আল্লাহপাক স্বয়ং নিজেই দিয়েছেন যথা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশঙ্কা রাখে এবং তার পালন কর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান? যে এরূপ করে না’ (সূরা জুমার, আয়াত নং-৯)।
বেহেশতবাসী পরহেজগার মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা রাত্রির শেষাংশে জাগ্রত থেকে নামাজ পড়ে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা’আলা তাদের বর্ণনা দিয়েছেন যে, ‘তারা (খোদাভীরুরা) রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সূরা আজ-জারিয়াত, আয়াত-১৭-১৮)।
মহান প্রভু পবিত্র কোরআনের সূরা ফুরকানে তাঁর প্রিয় বান্দাহ্দের ১৩টি বিশেষ গুণাবলী ও আলামত বর্ণনা করেছেন। সেই বিশেষ গুণসমূহের একটি হচ্ছে- তাহাজ্জুদ নামাজ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে।’ (সূরা আল- ফুরকান, আয়াত-৬৪)।
কেয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব-নিকাশের দিবসে কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে, তবে তার উচিত হবে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। শ্রেষ্ঠতম মুফাসিসরে কোরআন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে, তার উচিত হবে আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। (তাফসিরে কুরতুবি, মা’আরেফুল কোরআন, ক্বিয়ামুল লাইল)।
মহান আল্লাহ তা’আলা তাহাজ্জুদগুজার বান্দাহ্দের জন্য জান্নাতে অসাধারণ বালাখানা সজ্জিত করেছেন। হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (স.) বলেন, ‘জান্নাতে এমন কক্ষ থাকবে যার ভিতরের অংশ বাহির থেকে এবং বাইরের অংশ ভিতর থেকে দৃষ্টিগোচর হবে।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স.) এসব কক্ষ কাদের জন্য? উত্তরে রাসূল (স.) বললেন, যে ব্যক্তি সালাম করে, ক্ষুধার্তকে আহার করায় এবং রাত্রে যখন সবাই নিদ্রিত থাকে, তখন সে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী তিরমিজি ) (তাফসিরে মাজহারি, মা’আরেফুল কোরআন)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রোজ হাশরে সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপস্থিতিতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী প্রিয় বান্দাহদের মহান সম্মানে ভূষিত করবেন। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ হতে বর্ণিত আছে যে, ‘রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী মানবম-লীকে একত্রিত করবেন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী (যার আওয়াজ সমগ্র সৃষ্টিকুল শুনতে পাবে) দাঁড়িয়ে আহ্বান করবেন- হে হাশরের মাঠে সমবেত মানবম-লী, আজ তোমরা জানতে পারবে যে, আল্লাহপাকের নিকট সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী কে? অনন্তর সে ফেরেশতা ‘যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে’ এরূপ গুণের অধিকারী লোকগণকে দাঁড়াতে আহ্বান জানাবেন। এই আওয়াজ শুনে এসব লোক (তাহাজ্জুদগুজার) দাঁড়িয়ে পড়বেন, যাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। এদের হিসাব গ্রহণ ব্যতিতই বেহেশতে প্রেরণ করা হবে। অতঃপর অন্যান্য সমগ্র লোক দাঁড়াবে এবং তাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, মাজহারি, মা’আরিফুল কোরআন)।
তাহাজ্জুদ নামাজ; মন্দ কাজের কাফফারা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহান সুযোগ। তিরমিযি শরীফে হজরত আবু উমামা বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়। কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দাহর অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী। (মাজহারি, মাআরেফুল কোরআন)।
প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি কামনা করেন, আল্লাহ যেন তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন, তার এবাদত-বন্দেগি কবুল করেন এবং তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। এসব চাওয়া-পাওয়ার প্রধান অবলম্বন হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। সহিহ হাদিসের সবকটি কিতাবেই এই হাদিসটি বর্ণিত আছে যে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত রাসূল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষাংশে দুনিয়ার আকাশে বিরাজমান হন এবং ঘোষণা দেন যে, কোনো প্রার্থনাকারী আছ কি? যার প্রার্থনা আমি কবুল করব। প্রয়োজন প্রার্থনার কোনো লোক আছ কি? যার প্রয়োজন আমি পূর্ণ করে দেব। এবং কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।’
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে আরো অনেক সুস্পষ্ট আয়াতে কারিমা ও হাদিস শরীফ রয়েছে যা সীমিত পরিসরে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। উক্ত আয়াত ও হাদিস শরীফসমূহ থেকে এটি পরিষ্কার হয় যে, তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের এক মহান অবলম্বন।তাহাজ্জুদের বদৌলতে মানুষ মহান মর্যাদার অধিকারী হয়। জনৈক বুজুর্গ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উন্নতি চায় সে যেন শেষ রাত্রিতে জাগ্রত থেকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে।’ তাহাজ্জুদের ফলে মানুষের অন্তরাত্মা পশুত্বের প্রভাবমুক্ত হয়ে ঈমানি আলোয় উদ্ভাসিত হয়। ফলে হৃদয়ে প্রফুল্লতা আসে এবং এবাদতের স্বাদ অনুভূত হয়। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজ প্রতিটি মুসলিমের জন্য ইহকালীন উন্নতি ও পরকালিন মুক্তি।
• তারাবীহ্ এর নামাজ : শুধু মাত্র রমজান মাসে এই নামাজ পড়তে হয়। এশা'র নামাজের ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পরে এবং বিতর নামাজ এর আগে ২০ রাকাত তারাবীহ্ এর নামাজ আদায় করতে হয়। আহলেহাদীছদের মতে, তারাবীর ছালাত ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ৩ রাকাত বিতর সহ মোট ১১ রাকাত আদায় করা সুন্নাত।[৪]
ছলাতুত তারাবীহ বা তারবীহ নামায: তারাবীহ শব্দটি বহুবচন। একবচনে ‘তারবীহাতুন’। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্রাম নেয়া বা আরাম করা। পাঁচ তারবীহাতুন মিলে এক তারাবীহ। অর্থাৎ, চার রাকাআত পর পর বসে দুআ, দুরূদ ও তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে বিশ রাকাআত নামায আদায় করা হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘তারাবীহ’।
মাসআলা: তারাবীহ্ নামায বিশ রাকাআত।
পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের জন্যই এ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বিশ রাকাআত থেকে কেউ যদি এক রাকাআতও কম পড়ে তাহলে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে।
তারাবীহ নামায জামাআতে পড়া, তা খতম তারাবীহ হোক বা সূরা তারাবীহ হোক উভয়টিই পৃথকভাবে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। খতমে তারাবীহ পড়িয়ে বা কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামাআত-এর সাথে তারাবীহ বা অন্যান্য নামায আদায় করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।
তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত পড়ার দলীল
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাআতের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহ-এর নামায বিশ রাকাআত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি বিশ রাকাআত থেকে এক রাকাআতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহ-এর নামায বিশ রাকাআতই পড়তে হবে। এর উপরই ইজমা হয়েছে। যারা তারাবীহ-এর নামায ৮ রাকাআত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হাদীছ শরীফখানা দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাদ্বান শরীফ-এ এবং রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতর সহ) ১১ রাকাআত নামায আদায় করতেন।” মূলত এটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনা, তারাবীহ-এর নামাযের বর্ণনা নয়। কারণ তারাবীহ নামায শুধুমাত্র রমাদ্বান শরীফ-এর জন্যই নির্দিষ্ট। রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে তারাবীহ নামায নেই। আর তাহাজ্জুদের নামায সারা বছরই পড়তে হয়।
অতএব, হানাফী মাযহাব মতে “তারাবীহ-এর নামায বিশ রাকাআত”- এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة سوى الوتر.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকাআত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত।” অর্থাৎ তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত এবং বিতর তিন রাকাআত মোট তেইশ রাকাআত। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن على وعمر رضى الله تعالى عنهما وغيرهما من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم عشرين ركعة.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনূল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে, তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত।” (তিরমিযী শরীফ)
روى البيهقى باسناد صحيح كانوا يقيمون على عهد عمر عشرين ركعة على عهد عثمان وعلى رضى الله تعالى عنهم.

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন যে, “খুলাফায়ে রাশিদীন হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সকলেই বিশ রাকাআত (তারাবীহ) নামায আদায় করেছেন।”
عن يزيد بن رومان رحمة الله عليه انه قال كان الناس يقومون فى زمان عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه فى رمضان بثلث وعشرين ركعة.

অর্থ: “হযরত ইয়াযীদ ইবনে রুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই তারাবীহ নামায ও বিতর নামাযসহ মোট তেইশ রাকাআত নামায আদায় করতেন।” (মুওয়াত্তা ইমাম মালিক)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ১৭৫তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।
ছলাতুত তারাবীহ-এর নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রকাআতাই ছলাতিত তারাবীহ সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’রাকাআত তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
তারাবীহ নামায-এ দু’রাকাআত পর পর দুআ
তারাবীহ নামায-এর দু’রাকাআত পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তে হয়-
هذا من فصل ربى يا كريم المعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.
উচ্চারণ: হা-যা মিং ফাদ্বলি রব্বী ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহসিন ইলাইনা বি ইহসানিকাল ক্বদীম। ছাব্বিত ক্বুলূবানা আলা দীনিকা বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীন।
তারাবীহ নামায-এ চার রাকাআত পর পর দুআ
তারাবীহ নামায-এ চার রাকাআত পর পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তে হয়-
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.

উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকূতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল ক্বুদরতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামূতু আবাদান আবাদা। সুব্বূহুন ক্বুদ্দূছুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়ার রূহ্।
তারাবীহ নামায-এ চার রাকাআত পর পর মুনাজাত
اللهم صل على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا صلى الله عليه وسلم. رب ارحم هما كما ربيانى صغيرا. ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين. ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار. اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار. برحمتك ياعزيز ياغفار ياكريم ياستار يارحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الراحمين. سبحان ربك رب العزة عما يصفون. وسلام على المرسلين. والحمد لله رب العلمين.
মুনাজাত: আল্লাহুম্মা ছল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফী’য়িনা ওয়া মাওলানা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়্যানী ছগীরা, রব্বানা আফ্রিগ্ আলাইনা ছব্রাওঁ ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া না’ঊযুবিকা মিনান নার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরহমাতিকা ইয়া আযীযু ইয়া গফ্ফারু ইয়া কারীমু ইয়া সাত্তারু ইয়া রহীমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিক্বু ইয়া বা-র। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজীরু ইয়া মুজীরু ইয়া মুজীর। বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীন। সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন-ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন। ওয়াল-হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।

• জানাযার নামাজ : কোন মুসলমান মারা গেলে, মৃত দেহ কবর দেওয়ার আগে এই নামাজ পড়তে হয়। জানাযার নামাজ ফরযে কেফায়া।

• নিয়মিত জানাযার নামাজ না পড়ার কারণে অনেকেই নামাজের নিয়ম ঠিক মত জানেন না। তাই তাদের জন্য এটা শেয়ার করা হল।
• মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাইয়া, কাফন পরাইয়া তাহার মাগফিরাত ও পরকালে মুক্তির জন্য কতক লোক একত্র হইয়া যে নামায পড়িতে হয়, তাহাকে জানাযার নামায বলে। এই নামায মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া অথাৎ জানাযার সংবাদ শ্রবণকারী সকল লোকের পক্ষ হইতেই ফরয আদায় হইয়া যায়, আর কেহই আদায় না করিলে প্রত্যেককেই গাণাহগার হইতে হইবে।
• লাশকে গোসল করাইয়া কাফন পরাইয়া একটি প্রশস্ত পবিত্র স্থানে খাটের উপরে উত্তর শিয়রী করিয়া শয়ন করাইবে; তারপর মৃতের যাবতীয় ঋণ ও দেনা ইত্যাদি শোধ বা মাফ করাইয়া তাহার সন্তান বা অন্য কোন ওলী ব্যক্তি নামাযের ইমামতী করিতে মৃতকে সম্মুখে রাখিয়া তাহার বক্ষ বরাবর দন্ডায়মান হইবেন। লাশের ওলী নিজে ইমামতী না করিলে তাহার অনুমতিক্রমে অন্য কোন পরহেজগার আলেম ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হইবেন। ইমামের পিছনে মোক্তাদিরা তিন, পাঁচ বা সাত এইরূপ বে-জোড় কাতারে দাঁড়াইবে। এই নামায দাঁড়াইয়া আদায় করিতে হয়, ইহাতে কোন রুকু সিজদা বা বৈঠক ইত্যাদি নাই। এই নামায বসিয়া পড়িলে শুদ্ধ হইবে না।
• ইমাম ও মোক্তাগিণ একই সঙ্গে নিয়া কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাইয়া তাকবীরে তাহরীমা বলিয়া হাত বাঁধিবে। ইহার পর ক্রমান্বয়ে আর ও অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলিতে হইবে, তবে তাহাতে হাত উঠাইতে হইবে না, বরং তাহরিমা বাঁধা অবস্থায় থাকিবে। তাকবীর ইমাম এক শব্দ করিয়া উচ্চারণ করিবেন আর মোক্তাদিরা চুপে চুপে বলিবে।
• অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি বলিবার নিয়ম এইরূপ প্রথম অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমার পরে প্রত্যেকে (চুপে চুপে) ছানা পাঠ করিবে। তারপর ২য় তাকবীর বলিয়া (চুপে চুপে) দুরুদ পাঠ করিবে (তাশহাহুদের পরে যে দরূদ পঠিত হয়)। তারপর তৃতীয় তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবে।
• জানাযা নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُوَدِّىَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَازَةِ فَرْضُ الْكِفَايَةِ اَلثَّنَاءُ لِلَّهِ تَعَالَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَيْتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-
• উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিললাহে তায়ালা আরবাআ তাকরীরাতে ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিললাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতি এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আললাহু আকবার।
• অনুবাদঃ আমি আললাহর উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে কেফায়া কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আললাহু তায়ালার প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ) আললাহ মহান।
• নিয়তের মধ্যে অন্যান্য জামাতের নামাযের নিয়তের ন্যায় ইমাম তাহার অতিরিক্ত খাছ কালাম (আনা ইমামুললিমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু) এবং মোক্তাদিগণ তাহাদের অতিরিক্ত খাছ কালামটি পাঠ করিবেন।
• (একতেদাইতু বেহাযাল ইমাম) আর নিয়তের ‘লেহাযাল মাইয়্যেতি’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে, কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতি’ বলিতে হইবে।
• নিয়তের পরে ছানা পড়িতে হয়
• سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ-
• উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জালল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
• অনুবাদঃ হে আললাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম মঙ্গলময় এবং তোমার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ, তুমি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
• ছানার পরে তাকবীর বলিয়া তাশাহুদের পরের দরূদ পড়িতে হয়।
• اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
• উচ্চারনঃ আললাহুম্মা সাললিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাললাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আললাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
• অনুবাদঃ যে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম। হে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যেরূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
• তাবীয দিয়ে পয়সা খাওয়া কি হালাল ?
• জানাযার দোয়া
• اَلَّهُمَّ اغْفِرْلِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَه‘ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَ الاِْيْمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ-
• উচ্চারণঃ আললাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আললাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
• অনুবাদঃ হে আললাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আললাহ! আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যু মুখে পতিত কর।
• তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও। লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে।
• اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوَّ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًاوَّ ذُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا-
• উচ্চারণঃ আললাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
• অনুবাদঃ হে আললাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
• লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে।
• اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَّ ذُخْرًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَّمُشَفَّعَةً-
• উচ্চারণঃ আললাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়াহ।
• অনুবাদঃ হে আললাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও। দুইহাত দুইপাশে ঝুলাইয়া ইমাম সাহেব ডানে এবং বামে ছালাম ফিরাইবে।
• জানাযার নামাজ ও তার ফযীলত
• যখন কোন মুসলমান মারা যায় তখন তার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষভাবে কিছু দুআ করা হয়। ঐ বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুআ করার নাম জানাযার নামাজ। এই নামাযের ফযীলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের জানাযায় শরীক হয়ে নামাজ পড়ে এবং তাকে কবরও দেয় সে দু কীরাত নেকী পায়। প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড় সমান নেকী। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযায় নামাজ পড়ে এবং মাটি দেয় না সে এক কীরাত নেকী পাবে (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, ১৪৪ পৃষ্ঠা)।
• জানাযার নামাজের জন্য অযু শর্ত
বিখ্যাত তাবেয়ী নাফেঅ বলেন, আবদুল্লা ইবনু ওমর বলতেন, কেউ যেন বিনা অযুতে জানাযার নামায না পড়ে (মুঅত্তা ইমাম মালিক, ৮০ পৃষ্ঠা)। তবে হ্যাঁ, অযু করতে গিয়ে জানাযা যদি ছেড়ে যাবার আশংকা থাকে তাহলে ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, তুমি তায়াম্মুম কর এবং নামাজ পড় (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)।
লাশ ও ইমামের অবস্থান কিরূপ হবে?
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রা.) বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহর পেছনে একটি মেয়ের জানাযা পড়ি। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়ান (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১৪৫ পৃষ্ঠা)।
মুক্তাদীদের লাইন কটা হবে?
মালিক ইবনু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে মুসলমানের মরার পর তার জানাযায় মুসলমানদের তিন লাইন লোক নামাজ পড়ে তার জন্য (আল্লাহতা’য়ালা ক্ষমা) অপরিহার্য করে দেন। তাই জানাযা ইমাম মোক্তাদীর সংখ্যা যখন কম মনে করতো তখন মালেক (রা.) এই হাদীসটির ভিত্তিতে তিনটি লাইন করে নিতেন (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজা, মিশকাত, ১৪৭ পৃষ্ঠা)।
মুসল্লী সংখ্যা কত হওয়া উচিত?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মুসলমানের জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেননি যদি শরীক হয়ে ঐ লাশের জন্য দুআ করে তাহলে আল্লাহতা’য়ালা তাদের সুপারিশ নিশ্চয়ই কবুল করবেন (মুসলিম, মিশকাত, ১৪৫)
জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম
আবু ওমামাহ ইবনু সহাল ইবনু হোনায়ফ (রা.) বলেন, জানাযার নামাজে সুন্নত হল তকবীর দেয়া। তারপর সূরায়ে ফাতেহা পড়া। কিছু আয়াত পড়া তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে দরূদ পড়া। তারপর মাইয়েতের জন্য আন্তরিক দোয়া পড়া। (ফতহুলবারী ৩য় খণ্ড ২০৩ পৃ:)
আত্মহত্যাকারী, বেনামাযী ও ফাসেকের জানাযা
জাবের বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একজন আত্মহত্যাকারীর লাশ আনা হলে তিনি তার জানাযা পড়েননি (মুসলিম, বুলুগুল মারাম, ৩৯ পৃষ্ঠা)। এইরূপ জোহায়না গোত্রের এক ব্যক্তি খায়বারের দিনে গনীমতের (জেহাদেলব্ধ) মাল চুরি করায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা না পড়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ওলামায়ে কিরাম বলেন, আত্মহত্যাকারী এবং চোর ও ডাকাতের জানাযা আলেম ও পরহেযগার লোক না পড়ে সাধারণ লোক পড়বে। যাতে অন্যান্য লোকেরা সাবধান হয়ে যায় এবং শিক্ষা পায়।
গায়েবী জানাযা
আবিসিনিয়ার বাদশাহ আসহিমাহ নাজ্জাশী যেদিন মারা যান সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে ঐ মৃত্যু সংবাদ দিয়ে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে গিয়ে গায়েবী জানাযা পড়েন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১৪৪ পৃষ্ঠা)।
ইমাম ইবনু হাযম বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে যে, জামায়াত সহকারে গায়েবী জানাযা পড়া সাহাবায়ে কিরামের ইজমা বা সর্ববাদীসম্মত অভিমত। এর খেলাফ করা বৈধ নয় (মুহাল্লা, ৫ম খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা)।
আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসুফ যাইলায়ী হানাফী (রহ.) বাইহাকী এবং ওয়াকিদীর কিতাবুল মাগা-যীর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূতা যুদ্ধের দুই শহীদ রাসুলুল্লাহ পালক পুত্র যায়দ ইবনু হা-রিসাহ এবং আলীর বড় ভাই জাফর ইবনু আবী তা-লিবের গায়েবী জানাযা পড়েছিলেন

• ঈদের নামাজ: প্রতি ঈদে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া ওয়াজিব।
• "ঈদ এর নামাজ পড়ার নিয়ম"
• ঈদের নামায বছরে পড়তে হয় মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। বিষয়টা খুবই সহজ।
• নিয়তঃ
শুরুতে নিয়ত করুন যে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ৬ তাকবিরের সাথে ঈদ উল আযহার এর নাময পড়ছি। নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোন নিয়ম নাই। যে যেই ভাষার লোক সেই ভাষাতে নিয়ত করলেই হবে। এমন কি নিয়ত মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। (সব নামায এর ক্ষেত্রে)
• উল্লেখ্য ঈদ এর নামাজ ২ রাকাত পড়তে হয় এবং প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (ছানা পড়ার পর) আল্লাহুয়াকবার বলে হাত বেঁধে নামাযে দাঁড়ালেন এখন আপনাকে শুধু ছানা (সুবহানাকা) পড়তে হবে। তখন থেকে আপনাকে আর কিছু পড়তে হবেনা। ইমাম সাহেব ৩ টি তাকবীর বলবেন আপনি ও ইমাম এর সাথে তাকবীর বলবেন (হাত তুলে তাকবীর বলবেন কিন্তু হাত বাধবেন না) ইমাম সুরা পড়বেন, রুকু করবেন সিজদা করবেন আপনি শুধু রুকু সিজদার তাসবিহ পড়বেন
• দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা পড়ার পর)। এখানেও প্রতি তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিবেন অর্থাৎ হাত বাঁধতে হবেনা। এবার ও ইমাম কে অনুসরণ করুন
এইবার ৩য় তাকবীর শেষ হলে চতুর্থবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যান রুকুর তাসবিহ পড়ুন সিজদাতে গেলে সিজদার তাসবিহ পড়ুন । সিজদা থেকে উঠার পর আত্তাহিয়াতু/ সাল্লি আলা /বারিক আলা/ দুয়া মাসুরা(আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি পড়ুন এবং অপেক্ষা করুন ইমাম সাহেব সালাম ফিরালে আপনিও সালাম ফিরান। জুম্য়ার খুতবার ন্যায় দু'ঈদের খুতবা শোনাও ওয়াজিব। চুপ করে খুতবা শুনতে হয়।

বাংলা MCQ

বাংলা MCQ সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একেবারে নিচে দেয়া হয়েছে।  ১. বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন কোনটি? ক) পিনাক্লিয়েট ডাক্সন খ)  বুর্জ খলিফা  গ) সি...